অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : মাস্টার্স পাশ করে সাত বছর আগে নিজেই বেকার ছিলেন বগুড়ার এসএ জাহিদ (৩৪)। এখন তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন ৭০ জন যুবক।
আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ আর মসলার ব্যবসায় বদলে গেছে তার ভাগ্য। পেয়েছেন পুরষ্কারও। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে চান তিনি।
তরুণ এস এ জাহিদ উদ্যোক্তাদের জন্য এখন রীতিমতো অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার নতুন একটি নাম। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় জন্ম নিলেও বেড়ে ওঠেছেন বগুড়ায়।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বসবাস এখন বগুড়ায়। তার বাবা নুরুজ্জামান সরকার পেশায় শিক্ষক। মা সুলতানা রাজিয়া। ছোটবেলা থেকেই অর্থকষ্টে বড় হয়েছেন জাহিদ।
২০০৭ সাল থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি এক মুহূর্ত বসে থাকেননি জাহিদ। কাজ শুরু করেন। অল্প বেতনে শুরু করেন পার্টটাইম জব। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে তার ব্যয় নির্বাহ কষ্টসাধ্য ছিল। চিন্তা করেন নিজে কিছু করার।
বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেন। এরপর বেকারত্বের কষাঘাতে কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়নে। তবে সব কিছু মেনে নিয়ে অল্প কিছু পুঁজি নিয়ে ২০১৭ সালে শুরু করেন মৎস্য চাষ। প্রথমে দুইটি পুকুরে মাছ চাষ করে প্রত্যাশিত লাভ না পাওয়ায় জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ১ মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষ করে উন্নত পদ্ধতিতে নতুনভাবে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। এবার সফল হন। এরপর থেকে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি উন্মোচন হতে থাকে তার সামনে।
পরে বগুড়ার লাল মরিচ ও সরিষার তেলের দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা জানার পর সুযোগটি হাতছাড়া করেননি জাহিদ। বগুড়ায় ১২ শতক জায়গায় গড়ে তুলছেন তেল এবং মসলার কারখানা। শুরু করেছেন ইনটেক এড কম. কম.বিডি নামে একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। ওয়েবের পাশাপাশি ইনটেক এগ্রো নামে একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরি করেছেন। যার মাধ্যমে এখন সমগ্র দেশে সুনামের সাথে হোম ডেলিভারি সেবাও প্রদান করে যাচ্ছেন।
২০২৪ সালের ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক সফল আত্মকর্মী ক্যাটাগরিতে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। কীভাবে এত দ্রুত সফল আত্মকর্মী হয়ে উঠলেন, এ বিষয়ে জাহিদ বলেন, আমার ব্যবসার শুরুটা ছিল স্বপ্নের মত। তিন জন পার্টনার নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও তারা আস্তে আস্তে সবাই চলে যায়। শত বাধা আর প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি দমে যাইনি। নিরাশ হইনি। যেখানে আমি বেকারত্ব নিয়ে দিশেহারা ছিলাম। সেখানে আমার প্রতিষ্ঠানে এখন স্থায়ী কর্মী ৪০ জন। অস্থায়ীভাবে কাজ করছে আরো ৩০ থেকে ৩৫ জন। আমার স্বপ্ন আমি ২০৩০ সালের মধ্যে এক হাজার বেকার যুবক ও যুব-নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করব।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে যখন শুরু করেছিলাম, তখন আমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তখন থেকেই আমার পাশে ছিলেন আমার শিক্ষক বাবা, মা, বড় বোন। বড় ভাই আমাকে স্নেহ ও উৎসাহ দিয়ে সব সময় এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। তাদের এই প্রেরণা এবং সমর্থন ছাড়া আমি কখনো এতোদূরে আসতে পারতাম না।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জাহিদ বলেন, তাদের মূল্যবান পরামর্শ, দিকনির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণায় আমার প্রতিটি পদক্ষেপ আজ এতো সহজ হয়েছে। তাদের কাছে আমি চিরঋণী। আমি কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করে দেশ এবং সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।
জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন জাহিদ একজন মেধাবী ও কঠোর পরিশ্রমী তরুণ উদ্যোক্তা। সে আমাদের এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজ উদ্যোগে মৎস্য চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে। সরকারীভাবে শ্রেষ্ঠতার পুরস্কারও অর্জন করেছেন।
তিনি আরো বলেন, জাহিদ মৎস্য চাষের পাশাপাশি ঘানি থেকে সরিষার তেল, মসলা প্যাকেজিং, খেজুরের গুড় প্যাকেজিং করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করেন। যা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্যাকেটজাত করা হয় এবং ইতোমধ্যে বাজারে চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।
Leave a Reply